সোমবার-১২ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-২৯শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-১৪ই জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা বাংলাদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় অগ্রাধিকার

সশস্ত্র সংঘাতে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষায় নিরাপত্তা পরিষদকে আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।

২৫ মে (বুধবার) জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ‘সশস্ত্র সংঘাতে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা’ শীর্ষক বিতর্কে প্রদত্ত বক্তব্যে এ আহ্বান জানান জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা।

 

২৬ মে (বৃহস্পতিবার) রাতে জাতিসংঘের বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন জানায়, উন্মুক্ত বিতর্কটির আয়োজন করে নিরাপত্তা পরিষদের চলতি মে মাসের সভাপতি যুক্তরাষ্ট্র। মানবিক কাজে নিয়োজিত কর্মীদের প্রবেশাধিকার প্রত্যাখ্যান ও তাদের ওপর হামলার প্রেক্ষাপটে নিরাপত্তা পরিষদ যেসব সম্ভাব্য বাস্তবসম্মত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয় উন্মুক্ত বিতর্কটিতে।

রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা বাংলাদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় অগ্রাধিকার। আমরা এই অগ্রাধিকারকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে সবধরনের প্রচেষ্টা গ্রহণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, চলমান সংঘাত, দীর্ঘায়িত মানবিক সংকট ও ক্রমবর্ধমান জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির প্রেক্ষাপটে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যখন ক্রমাগত মানবিক চাহিদা বাড়ছে তখন প্রবেশাধিকার একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

মিয়ানমারের অনিশ্চিত নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বিলম্ব হচ্ছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, আমরা উদ্বিগ্ন যে মিয়ানমারের পরিস্থিতি বেসামরিক নাগরিকদের জন্য, বিশেষ করে জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য অত্যন্ত অনিরাপদ যার বাস্তব উদাহরণ হচ্ছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী।

মিয়ানমারে জাতিসংঘ এবং অন্যান্য মানবিক সংস্থার প্রবেশাধিকারের অনুমতি না দেওয়ার বিষয়টিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন রাষ্ট্রদূত ফাতিমা।

বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষায় বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি এবং তা বাস্তবায়নে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা যে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে চলেছেন তা তুলে ধরেন রাষ্ট্রদূত ফাতিমা।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রায় সাত হাজার শান্তিরক্ষী বিভিন্ন চ্যালেঞ্জিং মিশনে কাজ করছেন। তারা বেসামরিক এলাকায় নিরাপত্তা প্রদান করছেন, নিরবিচ্ছিন্ন মানবিক সেবা নিশ্চিত করছেন। স্বাস্থ্য ও সামাজিক সেবা প্রদানে সহায়তা করছেন, কমিউনিটির সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার পাশাপাশি নারী ও যুব সমাজকে ক্ষমতায়িত করছেন।

দুর্ভাগ্যবশত শান্তিরক্ষী এবং মানবিককর্মীরা ক্রমবর্ধমানভাবে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে এবং প্রায়শই ভুল ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য এসব আক্রমণকে উসকে দিচ্ছে। এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে এ ধরনের ঘটনা মোকাবিলায় আরও কার্যকর যোগাযোগ কৌশল তৈরি করতে হবে। শান্তিরক্ষা মিশনগুলোতে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার ক্ষেত্রে যে ম্যান্ডেট রয়েছে সে অনুযায়ী পর্যাপ্ত সম্পদের সংস্থান নিশ্চিত করার উপর জোর দেন তিনি।

সংঘাতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ যাতে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনে চলে সে বিষয়ে আরও সচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান জানান রাষ্ট্রদূত ফাতিমা।

আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে অপরাধীরা যাতে জবাবদিহিতার আওতায় আসে তা নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, বেসামরিক নাগরিক, স্কুল, হাসপাতাল ও মানবিক কাজে নিয়োজিত কর্মীদেরকে টার্গেট করে যারা হামলা চালায়, কোনো অজুহাতেই তাদের ক্ষমা করা যাবে না। এসব হামলার তদন্ত ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জাতীয় বিচারিক ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করা ও প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতসহ আন্তর্জাতিক জবাবদিহিতা ব্যবস্থাকে সমর্থন জোগানোর জন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানান বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on telegram
Telegram
Share on skype
Skype