বুধবার-১৪ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-৩১শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-১৬ই জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

চট্টগ্রামের ইতিহাস ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে  অপরিকল্পিত উন্নয়নে

উন্নয়ন সবাই চায়।সাধারণ জনগণ চায় তার গ্রামের রাস্তাটি পাকা রাস্তা হোক রাস্তার দুই পাশে সারি সারি তালগাছ, আকাশি গাছ, ও ফলজ গাছ থাকলে সৌন্দর্যতা আরও বৃদ্ধি পাবে। গ্রামের পুরনো জরাজীর্ণ প্রাইমারী স্কুল, হাইস্কুল নতুন রুপে ইট-পাথরের দালান হোক,ভিতরে কারুকাজ ইতিহাসের ছবি শোভা পাবে ছাত্র-ছাত্রীর সিলিং ফ্যানের নিচে বসে মন খোলে পড়াশোনা করবে একটা আধুনিকতার ছোঁয়া থাকবে এটাই সবার প্রত্যাশা। সব মিলিয়ে গ্রামের নান্দনিকতা একটা অনন্যরুপ ধারণ করবে।আর শহর তো সেই দিক থেকে একশত ধাপে এগিয়ে থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। আবার কিছু কিছু জেলা তার নিজস্ব স্বকীয়তায় ইতিহাস ঐতিহ্য ও সৌন্দর্যতায় অনন্তকাল যৌবনিকা ঘটাতে থাকে। কালের স্বাক্ষী হয়ে হাজারো বছরের পথচলার ইতিহাস প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের বিকাশ ঘটায়। তদরুপ চট্টগ্রাম আবহমানকাল ইতিহাস ঐতিহ্য ধারণ করে রেখেছে। এ সবি স্রষ্টার সৃষ্টি অপরুপ লীলাখেলা।

আড়াই হাজার বছরের আগ থেকেই এই নান্দনিক চট্টগ্রাম ইতিহাস ঐতিহ্য বহন করে আসছে। কালের বিবর্তনের সাথে নামের পরিবর্তন ঘটেছে বহুবার। কিন্তু সাগর নদী পাহাড় ঘেরা বেষ্টনীর অলৌকিক কারুকাজের নান্দনিকতা আর ইতিহাস ঐতিহ্য জলন্তভাবে দাঁড়িয়ে আছে। যেখানে আবার বার আউলিয়ার পণ্যভুমি হিসেবে খ্যাত। বর্তমান বড় বড় দালান কোঠা চাইতেও মোগল সম্রাজ্য আর ব্রিটিশ রাজত্বের ইতিকথার চুন সুর্কি দিয়ে তৈরি ইট-পাথরের লাল রঙের অট্টালিকা গুলো সৌন্দর্যের প্রতিকৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে স্বপ্নের নান্দনিকতা। মনে হয় চট্টগ্রাম আজ নিজস্ব স্বকীয়তা হারিয়ে অসহায়ত্ব হয়ে পড়েছে।

চট্টগ্রামবাসী উন্নয়ন চায়, কিন্তু কিসের উন্নয়ন কার জন্য উন্নয়ন, আজ তা ভাবিয়ে তুলছে চট্টগ্রামবাসীকে। যেখানে উন্নয়নের প্রয়োজন সেখানে উন্নয়ন হয়না। যেখানে স্কুল- কলেজ, ব্রিজ, মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল ফ্লাইওভার প্রয়োজন সেখানে হাহাকার, আর যেখানে অপ্রয়োজন সেখানেই ভবনের উপর ভবন, ফ্লাইওভারের উপর ফ্লাইওভার নির্মাণের জন্য আহামরি হয়ে উঠছে। বড় বড় বিশেষজ্ঞ আর নগর পরিকল্পনাবিদদের মাথায় যেনো উন্নয়ন নামক শব্দটি গোয়ালের বর্জ্যতায় মিশে আর্টিফিশিয়ালের প্ল্যান তৈরি কারকে পরিনত। সারারাত কম্পিউটার আর গুগুলে গবেষণা শেষ করে অফিসে গিয়ে নতুন ফর্মুলা নিয়ে জরুরী মিটিংয়ে উত্থাপন গতবছর যে আটতলা ভবন করা হয়েছে তার উপর মাস্টার প্ল্যান কর।এ যেনো উন্নয়নের নামে চাটুকারিতা অংশ। নগর পরিকল্পনার নামে একটা অপরিকল্পিত উন্নয়নের ছোঁয়া লাগছে। গত ১৫ বছরে জলবদ্ধতার যন্ত্রণা এখন চট্টগ্রামের নগরবাসীর কাছে নাভিশ্বাস হয়ে উঠছে। জলবদ্ধতার দূরীকরণের আশ্বাস উন্নয়নের মূলমন্ত্র ব্যবহার করে নগরবাসীর সাথে দিনের পর দিন প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই না। চট্টগ্রাম শহরটি ছিলো পরিবেশ প্রকৃতির অপরূপ রাণী যা প্রাচ্যের রাণী বলেই খ্যাত ছিলো, আজ তা পুঁজিবাদী আর রাজনৈতিক ঘেরা জালে পুরো চট্টগ্রামকে অপরিকল্পিত উন্নয়নের নামে গ্রাস করে নিয়েছে।

চট্টগ্রাম ইতিহাসের পরির পাহাড় এখন দানবে পরিনত হয়ে পড়েছে, ফয়েজ লেক এখন দানবের বস্তি হিসেবে পরিচিত, বায়েজিদ বোস্তামী ইতিহাস ঐতিহ্য পুকুরটিকে গিলে খেতে চেয়েছিলো মাজারের খাদেম নামক কমিটির হর্তাকর্তারা, দুষ্ট রাজনৈতিক নেতাদের কবলে আজ মতিঝর্না, গিলে খেয়েছে আরফিন নগর, জঙ্গল সেলিমপুর খুলশী জালালাবাদের উঁচু উঁচু পাহাড় গুলো। কবি কাজি নজরুল ইসলাম স্কোয়ার এখন ডিসিহিলে পরিনত তার মানে শুধু মাত্র আমলারাই আরাম আয়েশ করবেন আর সাধারণ জনগণ গেইটের বাহিরে ভিক্ষুকের মতো দাঁড়িয়ে থাকবে। নদী খেকো থেকে রক্ষা পায়নি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চালিকা ও হাজারো গানের যৌবনিকা কর্ণফুলী নদী। দখল করে নিয়েছে অনেক জমিদারের বাড়ি সেখানে গড়ে উঠেছে মহা অট্টালিকা, রক্ষা পায়নি নগরীর বেঁচে থাকার অবলম্বন ছোট ছোট খাল আর শত বছরের পুরোনো প্রকৃতির গাছ। শকুনের চোখ পড়েছে এখন সিআরবি’র দিকে, গিলে খেতে চাইছে সিআরবি ও টাইগারপাস নান্দনিকতার সৌন্দর্যটা কে। হারিয়ে যেতে বসেছে বিপ্লবী আন্দোলনের স্মৃতি ও মুক্তিযুদ্ধের গৌরবের অম্লান।

আজ আমরা আমাদের বেঁচে থাকার শক্তিকে নিজ হাতেই ধ্বংসের দৌড় গোড়ায় দাঁড় করিয়েছি। অবলীলায় দেহের উপর পেরাক ঠুকিয়ে মৃত্যু পথ বেঁচে নিয়েছি।বিবেক বুদ্ধি লোভ পেয়েছে হায়নাদের মতো হয় পরেছে। বাঁচার আকুতি আজ উন্নয়ন নামক শব্দটির কাছে মৃত্যু। চট্টগ্রামবাসী আজ নাভিশ্বাস হয়ে পরায় চট্টগ্রাম বাঁচাও ইতিহাস ঐতিহ্য রক্ষায় আন্দোলনে মাঠে নেমেছে। সরকারের উচিৎ অসুস্থ পরিকল্পনাকে সঠিক কাজে লাগাতে সুস্থ পরিকল্পনার মাপকাঠিতে আনার প্রয়োজন। পরিকল্পনাবিদকে না ঘোষণা করে পরিকল্পনাকারীকে হ্যা ইতিবাচকে তৈরি করা।।

লেখক —সাংবাদিক কামাল পারভেজ
চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান দৈনিক আমাদের নতুন সময়

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on telegram
Telegram
Share on skype
Skype