বৃহস্পতিবার-১৫ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-১লা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-১৭ই জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

নিঃশ্বাস বন্ধ করে দিয়ে দেহের উপর হাসপাতাল চাই না

একজন রোগী মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হযে পড়েছে। ডাক্তারের চিকিৎসার শেষ নেই, তারপরও রোগীর ভিতর লুকিয়ে থাকা মনে ভয় কাটছে না। দুর্ঘটনাটি যেন বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। যতবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে ততবার জ্ঞানহারা হয়ে পড়ছে। এবার ডাক্তার তার শেষ চিকিৎসায় বলছে আর হাসপাতালে নয়, দূরে কোথাও ভ্রমণে নিয়ে যাওয়া হোক রুগীকে। প্রকৃতির দৃশ্যই তার মনের গহীন থেকে দূর্ঘটনার স্মৃতি মুছে দিতে পারে। ঠিক স্রষ্টার সৃষ্টি প্রকৃতির মাঝে ফিরে পায় নিজের জীবনের বাঁচার আকুতি। আজ সেই বাঁচার আকুতি নিয়ে নগরবাসী ছুটে আসে চট্টগ্রাম ইতিহাস ঐতিহ্যের প্রাণের স্পন্দনের সিআরবি নামক জায়গাটিতে।

ভালোবাসা তো আরেক জনমের ফিরে পাওয়া অক্সিজেন। ভালোবাসার উপর মাথা রেখে দীর্ঘ নি:শ্বাস নিয়ে পথচলা হয় জীবনের অন্তকাল তাও আবার প্রকৃতির টানেই বাইরের ছায়ার তলেই ভালোবাসার উপর মাথাটুকু রাখার ঠিকানা তৈরি হয়। তোমার আমার ভালোবাসার স্মৃতি, তোমার আমার পথচলা তোমার আমার অটুট বন্ধন তৈরি করা, আবার হারিয়ে যাওয়া হাজারো স্মৃতি ফিরে পাওয়া এই সবি যেন শতবর্ষী বটবৃক্ষরাই কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আসাম- মেঘালয় থেকে ছায়া-রশ্মি সোজা চট্টগ্রামে কেন্দ্রবিন্দু পরিণত। ছোট ছোট বিন্দু সিন্ধুতার খুঁজে অপরূপ সেজে আছে বার আউলিয়ার পূণ্যভূমি। ভুল করেনি আসাম তার স্মৃতি তৈরি করেছিল সেইদিন এই সিআরবি নামক জায়গাটিকে।

আসাম বেঙ্গল তৈরি করেছিল কেন্দ্রীয় রেল দপ্তর। সেদিন খুঁজে পেয়েছিল তাঁরা তাদের বাঁচার প্রাণ কেন্দ্র। হতে পারে এই প্রকৃতির অভায়রন্যর জায়গাটি। মনের মাধুরিতে সাজিয়ে তুলেছিল সিআরবিতে। উঁচু পাহাড় না কেটেও প্রকৃতির সৌন্দর্য্য স্বকীয়তা রেখে তৈরি করেছিল ইট পাথরের লাল রঙ্গের নীড়। পাখির কল-কাকলীতে, বাঘের হুংকার, শিয়ালের হুক্কা-হুয়া ডাকে রাঙ্গিয়ে তুলতো পুরো চাটিগাঁওকে। নিরব বিস্তব্ধতায়, হঠাৎ করে ভেসে আসতো ঝক্ ঝকা ঝক্ ট্রেনের আওয়াজ। মনের মাধুরী বলছে এই শুনছো এই শুনছো তোমার ট্রেন আসছে, প্রস্তুত হও ছুটে যেতে হবে ট্রেনের কাছে। ট্রেনের ঝক্ ঝকা ঝক্ শব্দটাও যেন ভালবাসার কথা বলে। কালের বিবর্তনে আধুনিকতার ছোঁয়ার সেই কয়লার ইঞ্জিন চালিত ট্রেনে শব্দ আজ হারাতে বসছে। শুরু হলো বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন। ইংরেজদের শাসন আর শোষণের বিরুদ্ধে জবাব দিতে আমাদের বিপ্লবী দামাল ছেলেরা গর্জে উঠেছিল সেইদিন।

 

এক দফা, এক দাবী ইংরেজ তুই কখন যাবি, ইংরেজ হঠাও বাংলা গড়ো এই গানে বিপ্লবী সোনার ছেলেরা ফিরে পেয়েছিল বেঁচে থাকার প্রাণ। ইংরেজ হটিয়েও দমেনি এই বাংলার দামাল ছেলেরা। তেইশটি বছরের একতরফা শাসনের বিরুদ্ধে আবারও রুখে দাঁড়ালো এই বাঙলার আবাল-বৃদ্ধ একাত্তরের রনাঙ্গণের হাতিয়ার গর্জে উঠলো সিআরবি থেকে ৯ মাসের স্মৃতি বিজড়িত মুক্তিযোদ্ধাদের অঙ্গাঅঙ্গীভাবে জড়িত। মুক্তিযোদ্ধারা হারিয়েছে তাদের অনেক সহপাঠীদের। বৃট্রিশ আন্দোলনে প্রীতিলতার স্মৃতি থেকে স্বাধীনতার মুক্তিকামী শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের ১১টি সমাধীস্থল রয়েছে এই সিআরবিতে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চাকসু’র প্রথম নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রব সহ ১১টি সমাধিস্থল আজ অবহেলিত পড়ে আছে। রেল ভবন নির্মাণ শুরু থেকে আজ অবধি দুইশত বছর কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রাণের স্পন্দন চট্টগ্রামের ফুসফুসখ্যাত সিআরবি। চট্টগ্রামবাসীর ইতিহাস ও ঐতিহ্য ধারণ করে পথচলা আজ অবলীলায় ধ্বংস করতে ঘাপটি মেরে থাকা দেশ ও জাতির শত্রæ মাফিয়া চক্র আগ্রাসী থাবায় গ্রাস করতে চায় অক্সিজেন ডিপো খ্যাত সিআরবিকে। লোক চক্ষুর আড়ালে সমাজের মধ্যে এখনো রয়েছে আলবদর দোসরের চক্র যা চিহ্নিত করতে সরকারের দরজা খুলে যেতে পারে বলে চট্টলবাসীর ধারণা। এখন কাঁটা বেঁধে আছে গলার মাঝ বরাবর। স্বাদটুকু আগেই গ্রহন করে ফেলেছিলো। হঠাৎ করে কাঁটা বেঁধে যাওয়ায মহাশয়রা কালো বিড়ালের চরণ ধুলো নিতে ব্যস্ত বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু চট্টগ্রামবাসী তা মেনে নিবেনা। চট্টগ্রামবাসী মুরালী বাঁশির সুর ভালো করেই তুলতে পরেন। স্বার্থ রক্ষার জন্য চট্টগ্রামবাসী ঐক্য হতে দল মতের তোয়াক্কা করে চলেন না। তাই, চট্টগ্রামবাসীর প্রাণের দাবি নি:শ্বাস বন্ধ করে দিয়ে দেহের উপর হাসপাতাল নির্মাণের নামে ভবিষ্যত ফাইভস্টার হোটেল বানানোর স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে দিবে না।
আমাদের বাঁচার আকুতির জায়গায় যেনো লোহার পেরাক ঠুকা না হয়। আমরা বাঁচতে চাই আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম বাঁচাতে চায়, ইতিহাস-ঐতিহ্য জানতে চাইবে। নি:শ্বাসটুকু কেড়ে নিয়ে দেহের উপর বড় লোকদের হাসপাতাল নির্মাণ চাই না।

লেখক: ব্যুরো প্রধান
দৈনিক আমাদের নতুন সময়

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on telegram
Telegram
Share on skype
Skype