বুধবার-১৪ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ-৩১শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ-১৬ই জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

চীনা ভাষার অংশে সই করেছে টিকার চুক্তিতে

পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করায় টিকা পাওয়ার দৌড়ে। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে এমনটিই বলেছিলেন ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে গত বুধবার বাংলাদেশ চুক্তির জন্য যে নথিতে সই করেছে, তাতে আবার ইংরেজি ভাষার অংশের বদলে চীনা ভাষার অংশে সই করে ফেলেছে। সেই অংশে কী আছে, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে চীনা ভাষায় দক্ষ একজন অধ্যাপককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেছেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুধু যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার কাজটি করছে। চুক্তি, টিকা কেনা ও আনার সব দায়িত্ব পালন করছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।

চীনের সঙ্গে টিকা কেনার চুক্তি ও প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা নিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় যে সময়ক্ষেপণ করছে, তাতে হতাশা প্রকাশ করেছেন

বেইজিংয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, একই ধরনের ঘটনা ঘটছে রাশিয়ার কাছ থেকে টিকা কেনার ক্ষেত্রেও।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে এ মাসের শুরুর দিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, বিশ্বে টিকার সংকট আছে। এটি সাপ্লাইয়ার্স মার্কেট (সরবরাহকারীর বাজার)। সিদ্ধান্ত নিতে বেশি দেরি করা ঠিক হবে না।

জানা গেছে, টাকা দেওয়ার পরও চুক্তি অনুযায়ী ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে টিকা সরবরাহ করতে না পারায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্ভাব্য চুক্তিগুলোতে সতর্কতা অবলম্বন করছে।

বিশেষ করে টিকা পৌঁছানোর নিশ্চয়তার বিষয়টি চুক্তিতে রাখতে চাচ্ছে। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, দর-কষাকষি করার অধিকার বাংলাদেশের অবশ্যই আছে।

কিন্তু এটি করতে গিয়ে টিকা অনিশ্চিত বা টিকা পাওয়ার উদ্যোগটিই ঝুলে থাকতে পারে। কারণ এখন বিশ্বে টিকার চাহিদার তুলনায় উৎপাদন ও সরবরাহ কম থাকায় দর-কষাকষিতে উৎপাদন ও সরবরাহকারীদের ভূমিকা আগের চেয়ে বেড়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন গতকাল সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘চীনের সঙ্গে চুক্তি মোটামুটি চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। চীন তিনটি ডকুমেন্ট পাঠিয়েছিল।

এর মধ্যে আমরা দুটি পাঠিয়েছি পূরণ করে। দুটির মধ্যে একটি, যেটি কালকে (গত বুধবার) গেছে সেটির কিছু অংশ ছিল ইংরেজিতে, বাকি অংশ ছিল চীনা ভাষায়।

আমরা পূরণ করে পাঠানোর সময় চীনা জায়গায় সই করে দিয়েছি। কালকে আবার চীনা ভাষার একজন প্রফেসর নিয়োগ করে সেটি আবার সই করতে হবে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দিজ আর লাউজি (এগুলো খারাপ) কাজ হয়েছে। আমরা (পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) এটি করিনি। আমরা শুধু কানেকশনটি করে দিই। এগুলো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ। কখন, কিভাবে আনবেন তাঁরা ঠিক করেন। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। সেখানে একটু দেরি হচ্ছে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমাদের রাষ্ট্রদূত খুবই হতাশ। ডকুমেন্টগুলো না হলে প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা যাবে না। তিনি বেইজিংয়ে চূড়ান্ত করছেন। তিনি খুবই হতাশ। তিনি আমাকে ফোন করেছেন। টেক্সট দিয়েছেন। ফোন করার পর বলেছি, আমাকে টেক্সট দেন। তিনি টেক্সট পাঠালে আমি সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্যসচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব সাহেবকে পাঠিয়েছি। এই অবস্থায় আছে।’

রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রাশিয়ার সঙ্গেও আমাদের ডকুমেন্টগুলোর কিছু হয়েছে, কিছু হয়নি। একসময় একটা পরিমাণ (টিকার পরিমাণ) বলা হয়েছে। পরে আবার পরিবর্তন করা হয়েছে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রাশিয়ানরা এগুলো পছন্দ করে না। আপনি বললেন, আমি এত আনব। পরে বললেন যে আরো কমিয়ে আনব। এগুলো নিয়ে আমরা এখন ব্যস্ততায় আছি। আশা করছি, এ সপ্তাহের মধ্যেই সব কিছুই ঠিক হবে।’

ড. মোমেন বলেন, গত বুধবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওই ডকুমেন্ট পাঠিয়েছেন। রাশিয়ার সঙ্গে ক্রয়চুক্তি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। রাশিয়া চায়, আপত্তি থাকলে স্পষ্টভাবে জানাতে।

ভারত থেকে টিকা পাওয়ার সম্ভাবনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্করকে তিনি ফোন করেছিলেন। ভারত কখনো বলেনি যে টিকা দেবে না; কিন্তু তারা দিতে পারছে না।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ দেশে ১৫ লাখ লোকের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার দ্বিতীয় ডোজের অনিশ্চয়তার বিষয়টি তুলে ধরে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছেন, রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা থাকলে উপহার দেন।

জবাবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশের চাহিদার বিষয়টি তাঁরা জানেন। কিন্তু ভারতের অবস্থা খারাপ। প্রতিদিন চার হাজারের বেশি লোক মারা যাচ্ছে করোনায়।

অনেক শনাক্ত হচ্ছে। মাসে ২০ কোটি ডোজ টিকা দরকার। কিন্তু সেরাম ইনস্টিটিউট ১০ কোটি ডোজও উৎপাদন করতে পারছে না।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশ অন্য কোথাও থেকে টিকা পাওয়ার চেষ্টা করছে কি না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে টিকা চাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে ভারতের

পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছেন তিনি যেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে এ ব্যাপারে অনুরোধ করেন। ড. মোমেন বলেন, জয়শঙ্করের সঙ্গে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে; কিন্তু জয়শঙ্কর বলতে পারেননি যে ভারত টিকা পাঠাতে পারবে।

এদিকে টিকার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের চিঠির অপেক্ষায় আছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন। তিনি বলেন, অসমর্থিত বিভিন্ন সূত্রে তাঁরা জানতে পেরেছেন যে যুক্তরাষ্ট্রের টিকা দেওয়ার অগ্রাধিকার তালিকায় বাংলাদেশ নেই।

বাংলাদেশ যাতে যুক্তরাষ্ট্রের টিকার অগ্রাধিকার তালিকায় থাকে সে জন্য যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশিরা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের স্বাস্থ্যনিরাপত্তা ও বৈশ্বিক কভিড সাড়াদানবিষয়ক সমন্বয়ক গেইল স্মিথ গত বুধবার বিকেলে এক টেলিফোনিক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন,

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ছয় কোটি ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রে অনুমোদিত দুই কোটি ডোজ টিকা অন্য দেশগুলোকে দেবে। তবে কোন দেশ কত ডোজ টিকা পাবে, তা নির্ধারণ করা হয়নি।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on email
Email
Share on telegram
Telegram
Share on skype
Skype