[caption id="attachment_5643" align="alignnone" width="539"]
হুমায়ুন আজাদ। ফাইল ছবি।[/caption]
আজ প্রথা ভাঙ্গার রূপকার হুমায়ুন আজাদের জন্মদিন। বাংলা সাহিত্য অঙ্গণে অনন্য মননশীল, বহুমাত্রিক জ্যোতির্ময়। ১৯৪৭ সালের ২৮ এপ্রিল তিনি মুন্সীগঞ্জের রাঢ়িখাল গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন।
বাংলা সাহিত্যে প্রথাবিরোধী লেখক হিসেবে হুমায়ুন আজাদ যোগ করেন এক ভিন্ন মাত্রা। জন্মদিনে এই প্রখ্যাত লেখক, সাহিত্যিক কবিকে জানাই অনেক অনেক শ্রদ্ধা।
তিনি ছিলেন একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, ভাষাবিজ্ঞানী, সমালোচক, রাজনীতি ভাষ্যকার ও কিশোর সাহিত্যিক। তিনি ৭০টির বেশি বই লিখেছেন। প্রতিটি ক্ষেত্রেই সৃষ্টি করেছেন ভিন্ন ধারা।
ছাত্রজীবনে তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। তিনি ১৯৬২ সালে রাড়িখাল স্যার জে সি বোস ইন্সটিটিউশন থেকে পাকিস্তানের মধ্যে ১৮তম স্থান অধিকার করে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৭ সালে স্নাতক (সম্মান) ও ১৯৬৮ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। উভয় ক্ষেত্রে তিনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান লাভ করেন। মৃত্যুর আগপর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন।
ক্লাস নাইনে পড়ার সময় হুমায়ুন আজাদ প্রথম উপন্যাস লেখা শুরু করেন। শৈশবের পড়ার ঘরের সামনে ছিল একটি কদম গাছ। বর্ষায় ফুল ফুটে গাছটি রূপসী হয়ে উঠতো। এটিকে নিয়েই তিনি প্রথম উপন্যাস লিখতে শুরু করেছিলেন।
ছোটবেলায় শরৎচন্দ্রের গৃহদাহ ও দত্তা উপন্যাস পড়ে আপ্লুত হয়েছিলেন তিনি। হুমায়ুন আজাদের প্রথম প্রকাশিত বই ‘অলৌকিক ইস্টিমার’ (১৯৭৩) কবিতার হলেও এর পরে ভাষাবিজ্ঞান চর্চায় বেশি গুরুত্ব দেন।
কাব্যগ্রন্থ ‘জ্বলো চিতাবাঘ’ (১৯৮০), ‘সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে’ (১৯৮৫), ‘যতোই গভীরে যাই মধু যতোই উপরে যাই নীল’ (১৯৮৭), আমি বেঁচেছিলাম অন্যদের সময়ে’র (১৯৯০) মাধ্যমে কবিতাপ্রেমীদের দৃষ্টি কাড়েন।
তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘ছাপান্ন হাজার বর্গমাইল’ আলোড়ন তোলে ও বিপুল সমাদৃত হয়। উপন্যাসের মাধ্যমেও তিনি তার চেতনার প্রকাশ ঘটাতে থাকেন।
‘সবকিছু ভেঙে পড়ে’ (১৯৯৫), ‘মানুষ হিসাবে আমার অপরাধসমূহ’ (’৯৬), ‘রাজনীতিবিদগণ’ (’৯৮), ‘কবি অথবা দণ্ডিত অপুরুষ’ (’৯৯), নিজের সঙ্গে নিজের জীবনের মধ’ (২০০০), ‘ফালি ফালি করে কাঁটা চাঁদ’ (’০১),
‘শ্রাবণের বৃষ্টিতে রক্তজবা’ (’০২), ‘একটি খুনের স্বপ্ন’ (’০৪) ও ‘পাকসার জমিন সাদ বাদ’ (’০৪) একে একে প্রকাশিত হতে থাকে এবং বিপুল প্রশংসিত হতে থাকে।
২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় একুশে বইমেলা থেকে বের হয়ে বাসায় ফেরার পথে তাঁর উপর শারীরিক আক্রমণ করেন ধর্মীয়-উগ্রবাদীরা। গুরুতর অবস্থায় তাঁকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে সরকার তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে পাঠায়। ১১ আগস্ট রাতে জার্মান কবি-সাহিত্যিক-শিল্পীদের দেওয়া একটি পার্টি থেকে ভালোভাবেই নিজের ফ্ল্যাটে ফিরেন।
এ রাতেই কোনো একসময় হুমায়ুন আজাদ মৃত্যুকে আলিঙ্গণ করেন। ১২ আগস্ট ভোরে ফ্ল্যাটের নিজ কক্ষে তাঁকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তিনি কুসংস্কারহীন এক আধুনিক সমাজের স্বপ্ন দেখতেন।
কিন্তু মৌলবাদীরা তার স্বপ্নকে সত্যি হতে দেয়নি। কিন্তু আমরা চাই হুমায়ুন আজাদের আকাঙ্ক্ষিত সেই বাংলাদেশকে। তবেই তাঁর প্রতি আমাদের সন্মান জানানো হবে।
প্রকাশক ও সম্পাদক: প্রকৌশলী দিলু বড়ুয়া । সম্পাদকীয় কার্যালয়: ৯২ মোমিন রোড, শাহ্ আনিছ মসজিদ মার্কেট(৪র্থ তলা), জিপিও, কোতোয়ালী, চট্টগ্রাম। যোগাযোগ: ইমেল: [email protected], মোবাইলঃ ০১৮৫১০৭১১৭০
Copyright © 2025 ইতিহাস ৭১ টিভি. All rights reserved.