বাংলা ও বাঙ্গালীর প্রাণের স্পন্দন হচ্ছে পহেলা বৈশাখ। এই বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীতে সফলতা-ব্যর্থতা, আনন্দ-বেদনা, হাসি-কান্না সব মিলিয়ে শেষ হতে চলেছে একটা বছর। সব দুঃখের স্মৃতি ভুলিয়ে নতুন নতুন আনন্দে ভরা স্মৃতি তৈরি করার সময় চলে এসেছে।
তাই পহেলা বৈশাখের এই শুভ দিনটিকে পরিবারে সাথে আনন্দের সঙ্গে উপভোগ করুন।
“যেমন বচন আছে / চৈতে গিমা তিতা,/ বৈশাখে নালিতা মিঠা,/ জ্যৈষ্ঠে অমৃতফল আষাঢ়ে খৈ,/ শায়নে দৈ।/
ভাদরে তালের পিঠা,/ আশ্বিনে শশা মিঠা,/ কার্তিকে খৈলসার ঝোল,/অগ্রাণে ওল।
পৌষে কাঞ্ছি, মাঘে তেল,/ফাল্গুনে পাকা বেল।”
পহেলা বৈশাখে বিশেষ খাবার ছাতু, চিড়া, দই, মুড়ি, খই, তিল ও নারিকেলের নাড়ু ইত্যাদি খাওয়ার নিয়ম রয়েছ। তার সাথে দুপুর বেলার খাবারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ‘চৌদ্দ’ রকমের শাক খাওয়া।
এর মধ্যে অন্তত একটি তিতা স্বাদের হতে হবে। যেমন গিমা শাক। চৈত্র মাসে গিমা শাক খেতেই হবে। গ্রাম বাংলায় প্রচলিত একটি প্রবাদ আছে -“শাক শাক বারো শাক, পাতে দিলে জামাই রাগ”।এখানে বারো শাক বলা হলেও সাধারণত এর চেয়ে বেশি পরিমাণ শাকও রান্না হয়।
আমরা শাক কাটি এটি সচরাচর বলি না। এর একটা কারণ হতে পারে গাছটি উপড়ে ফেললে বা কেটে ফেললে প্রাণ বৈচিত্র নষ্ট হবে। কিন্তু যদি চারপাশের প্রাণ ঠিক থাকে তাহলে আগামী বর্ষে প্রবেশ শুভ, পহেলা বৈশাখ শুভ।
তাই বুঝাই যাচ্ছে, পহেলা বৈশাখ আসলে লোকজ জ্ঞানের পরিচয়। এখানে বাংলার জনগোষ্ঠির যাপিত জীবনের সাথে অঙ্গাঙ্গি হয়ে বিরাজ করে সংস্কৃতি।
এমনকি বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর কাছে এটি একধরনের লোকজ চিকিসা ব্যবস্থা। তাঁদের জীবনাচরণের বিশ্বাস ঋতু পরিবর্তনের এই সময় বিভিন্ন শাক-সবজি দিয়ে রান্না পাঁচন খেলে পরবর্তী বছরে রোগ-ব্যাধী কম হবে।
দেখা যায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর উৎসব বিঝুর দিনে বাড়ীতে টক, মিষ্টি, পাঁচন রান্না করা হয়। এটা আর কিছু নয় এই বিশ্বাস থেকেই যে বছরের শেষ দিন তিতা, মিঠা খেয়ে বছর বিদায় দিলে বিগত বছরের দুঃখ কষ্ট, আনন্দ বেদনা দূর হয়ে যাবে।
শুধু তাই নয় সমতলের মতই তারাও দলবেঁধে নৃত্য করে ঘুরে বেড়ায় ও গঙ্গা দেবতার পুজো দেয়। এই পুজোও আসলে সেই কৃষি বা খাদ্য সংগ্রহ প্রক্রিয়ার সাথেই সম্পৃক্ত।
শত শত বছর ধরে এদেশের মানুষের এইযে প্রত্যাশা সেখানে অর্থনীতির একটি বিশাল যোগসূত্র রয়েছে। অর্থনীতির হিসাবে বলতে গেলে, একটি চক্রাকার হিসাবে সকল পর্যায়ে ধর্ম-বর্ণ, গোত্রের ও শ্রেণী-পেশার মানুষ এর সাথে সম্পৃক্ত।
তবে নগর সংস্কৃতির ডামাডোলে পহেলা বৈশাখ সর্বজনীন মিলনমেলায় পরিণত করতে যেয়ে পুঁজিবাদী অর্থনীতির করাল গ্রাসে আবহমান গ্রামবাংলার চাষীর যে আনন্দঘন উৎসব আর জীবনাচরণের সাথে মিশে থাকা বিশ্বাস কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে।
প্রকাশক ও সম্পাদক: প্রকৌশলী দিলু বড়ুয়া । সম্পাদকীয় কার্যালয়: ৯২ মোমিন রোড, শাহ্ আনিছ মসজিদ মার্কেট(৪র্থ তলা), জিপিও, কোতোয়ালী, চট্টগ্রাম। যোগাযোগ: ইমেল: [email protected], মোবাইলঃ ০১৮৫১০৭১১৭০
Copyright © 2025 ইতিহাস ৭১ টিভি. All rights reserved.