ইতিহাস ৭১ ডেস্ক : স্বাগত ২০২১। নতুন বছর মানেই নতুন আশা, নতুন স্বপ্ন। নতুন বছরে নাগরিক প্রত্যাশায় ভিন্নতা আছে। ২০২১ সালে উদযাপিত হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। কারো চিন্তা রাজনৈতিক, কারো অর্থনৈতিক। আবার কারো সামাজিক। সবচেয়ে বেশি প্রত্যাশা নিরাপত্তা, সুশাসন ও গণতন্ত্রের। সাথে যোগ হয়েছে করোনা থেকে মুক্তির বিষয়টি। বাঙালির চাওয়া, চেতনায় জাগ্রত আবহমান সেই মাঙ্গলিক বোধ অতীতের জীর্ণতা অতিক্রান্ত দিনমাসপঞ্জির হিসাব ডুবে যাক বিস্মৃতির কালগর্ভে; নতুন দিনের সূর্যালোকে উদ্ভাসন হোক সবুজ-সজীবতা। মুছে যাক অপ্রাপ্তির বেদনা; নতুন প্রত্যয়ে জেগে উঠুক নতুন সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা।
মুক্তিযুদ্ধের গৌরবে উদ্ভাসন এ স্বাধীন জাতি-রাষ্ট্রের এটাই হোক একাট্টা প্রত্যাশা। গতি পাক সমাজের অগ্রসরতার ঘূর্ণায়মান চাকা। রঙিন হয়ে উঠুক সবার জীবনে। সুস্থ রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে সমৃদ্ধ হোক বাংলাদেশ। নতুন বছরের সূর্যের আলোয় জ্বলে উঠুক শুভবোধ, মঙ্গল ও কল্যাণের আলো
সাধারণ মানুষের প্রধান চিন্তা টিকে থাকা নিয়ে। তারা ভাবছেন বাজারদর, নিরাপত্তাসহ ভালোভাবে বেঁচে থাকার কথা। পদ্মা সেতুকে সরকারের জন্য ট্রাম কার্ড বলছেন অনেকেই। এ বছরের শেষ নাগাদ এই সেতু উদ্বোধনের চিন্তা করা হচ্ছে। পদ্মা সেতু চালু হলে সরকারের জনপ্রিয়তা বাড়বে মনে করেন অনেকে।
২০২০ সাল পুরোটাই কেটে গেল বিশ্বজুড়ে জেঁকে বসা করোনার ভয়াবহ সংক্রমণের মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশে সরকারিভাবে প্রথম করোনা সংক্রমণের ঘোষণা আসে ৮ মার্চ। এই করোনা চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে গিয়ে স্বাস্থ্যব্যবস্থার কঙ্কাল মূর্তির উন্মোচন ঘটেছে। করোনা সংক্রমণে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেছে বহু মানুষ। মৃত্যু পথযাত্রী রোগীদের নিয়ে আপনজনেরা একের পর এক বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়ে রোগীকে ভর্তি করাতে পারেননি। চিকিৎসক কিংবা আত্মীয়স্বজনদের অমানবিক রূপটিও প্রকাশ পেয়েছে। সরকার করোনা সংক্রমণ কমিয়ে আনার জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। দূরপাল্লার বাস-ট্রেন বন্ধ ছিল। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলকারখানা বন্ধ হয়ে যায়। পোশাক খাত বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে। সরকার প্রণোদনা হিসেবে অতি স্বল্পসুদে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ঋণ ঘোষণা করে।
বিদায়ী বছর ২০২০ সালে লেখাপড়ার বিরাট ক্ষতি হয়েছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত কোথাও পাঠদান করা হয়নি। করোনা সংক্রমণে অনেক মানুষ কর্মচ্যুত হয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে মজুরি কমিয়ে দেয়া হয়েছে। অনেকেই ভাড়া বাসা ছেড়ে দিয়ে গ্রামে ফিরে গেছেন। ২০২০ সালে ভয়ানকভাবে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ধর্ষণের কবল থেকে শিশু, কিশোর-কিশোরী এবং পূর্ণবয়স্ক নারী কেউই রক্ষা পাননি। জানা গেছে, করোনাকালে ১১ মাসে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিহত করার জন্য ১৮ হাজার মামলা হয়েছে।
করোনা মহামারীর কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে ওলটপালট হয়ে গেছে। বেশির ভাগ বড় অর্থনীতির দেশ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাংলাদেশ করোনার মধ্যেও কিছুটা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পেরেছে। তা সত্ত্বেও অর্থনীতির উল্লেখযোগ্য ক্ষতি করেছে মহামারী করোনা।
নতুন বছরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বন্ধ দুয়ার খুলবে- এমন আশা দেশের কোটি শিক্ষার্থী, শিক্ষক আর অভিভাবকের। অর্থনীতির মন্থর চাকা নতুন বছরে সচল হবে এমন আশা নিয়ে তাকিয়ে সবাই। করোনার কারণে রেমিট্যান্স যোদ্ধা প্রবাসীদের জন্য শ্রমবাজার আবার উন্মুক্ত হবে- এমন প্রত্যাশা সবার। একইসঙ্গে ঝিমিয়ে পড়া দেশের রাজনীতির মাঠ আবার সচল হবে, মাঠের রাজনীতি মাঠে গড়াবে- এমন প্রত্যাশা রাজনৈতিক দলগুলোর।
নতুন বছরটি সবার জন্য অমিত সম্ভাবনা আর প্রত্যাশিত প্রাপ্তি নিয়ে আসুক এটাই দেশবাসীর কামনা।
পূর্বাকাশে রক্তিম আভা ছড়িয়ে উঁকি দিয়েছে নতুন বছরের প্রথম সূর্য। নানা প্রাপ্তি আর ব্যর্থতার সাক্ষী হয়ে মহাকালের অতল গর্ভে বিদায় নিয়েছে ২০২০ সাল। আজ নববর্ষ। শুরু হলো খ্রিষ্টীয় ২০২১ সালের পরিক্রমা। বিগত বছরের নানা ব্যর্থতার গ্লানি ভুলে নতুন স্বপ্নে জীবন সাজানোর প্রত্যাশায় বুক বেঁধেছে গোটা জাতি। উন্নয়নের সিঁড়িতে দেশকে আরও একধাপ এগিয়ে নিতে উন্মুখ দেশ গড়ার কারিগররা।
তবে নতুন বছরে নানা আশঙ্কার মাঝে আশার আলোও একেবারে কম নেই। অর্থনীতি সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন ডলারের শক্তিশালী রিজার্ভ গড়ার লক্ষ্য অর্জনের কাছাকাছি ২০২১ সালেই পৌঁছে যাবে বাংলাদেশ। শতভাগ বিদ্যুতায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা আছে এ বছরেই।
সমাপ্তি হবে সরকারের মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে ২টি প্রকল্পের। এছাড়া মুজিববর্ষ উপলক্ষে সরকারের বড় কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেশের ৮ লাখ ৮২ হাজার ৩৩টি ঘরহীন পরিবারকে আধপাকা টিনশেড ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে তা নতুন বছরের ১৭ মার্চের মধ্যেই সম্পন্ন হবে।