আল মামুন মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জের ঘিওর ও শিবালয় উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা ঘিওরের ধুলন্ডী গ্রাম। এই দুই উপজেলার কমপক্ষে ৬ টি গ্রামের কয়েক হাজার বাসিন্দাদের যাতায়াতের ভরসা একটি মাত্র বাঁশের সাঁকো। তাও যেন তেন সাঁকো নয়, প্রায় ৩শ ফিট লম্বা আর ২০ ফুট উচ্চতার সরু বাঁশের সাঁকো। স্বাধীনতার পর থেকেই এসব গ্রামের বাসিন্দারা এভাবে পাড়াপাড় হয়ে আসছেন। নিজেদের টাকায় ও স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে সাঁকোটি তৈরী ও রক্ষণাবেক্ষণ করছেন তাঁরা। সরেজমিনে দেখা যায়, ঘিওর উপজেলার বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের ধুলন্ডী গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ইছামতির শাখা নদী। ধুলন্ডী বাজার থেকে কর্দমাক্ত কাাঁচা রাস্তা পাড়ি দিয়ে উঠতে হয় সরু বাঁশের সাঁকোতে। নদীর ওপর প্রায় ৩শ ফিট দীর্ঘ এই বাঁশের সাঁকো দেখলে যে কারো পিলে চমকে যাবার অবস্থা।
অথচ আশেপাশের ৫/৬ টি গ্রামের হাজারো মানুষজন প্রতিনিয়ত এই সাঁকো দিয়ে পারাপার হচ্ছেন বছরের পর বছর। সাঁকো পাড়ি দিয়ে বাজার, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে হয় ২ কিলোমিটার দূরের বাজারে। কৃষিপণ্য বিক্রি করা নিয়ে পরতে হয় ঝামেলায়। আধুনিক এই যুগেও এসব গ্রামবাসীর দূর্ভোগ লাঘবে সাড়া মেলেনি কারোই। নানা সময়ে নানা জনপ্রতিনিধি শুধু আশ্বাসের বাণীতেই সীমাবদ্ধ রয়েছেন। স্থানীয়রা বলেন, দুই উপজেলার সীমান্ত আলাদা করে বয়ে গেছে ইছামতির শাখা নদী। এই দুই উপজেলার ধুলন্ডী, সাহিলী, চৌবাড়িয়া, কালাচাঁদপুর, ভালকুটিয়া, বাষ্টিয়াসহ আশেপাশের কয়েকটি গ্রামের মানুষজনের নিত্য প্রয়োজনে যাতায়াত করেন। যুগ যুগ ধরে এসব মানুষের যাতায়াতের মাধ্যম বাঁশের সাঁকো। মহাদেবপুর ডিগ্রি কলেজ, গার্লস স্কুল, গোপাল চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়, কিন্ডার গার্টেন দিশারী, ধুলন্ডী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীদের ঝুঁকির মধ্যে পারাপার হতে হয় সাঁকো দিয়ে। বালিয়াখোড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল আওয়াল খান বলেন, এপাড়ে ঘিওর উপজেলার বালিয়াখোড়া ইউনিয়ন আর অপর পাশে শিবালয় উপজেলার মহাদেবপুর ইউনিয়ন। দুই ইউনিয়নের ৫/৬ টি গ্রামের মানুষ এই সাঁকো দিয়ে পারাপার হয়ে থাকে। হাট বাজার, জেলা সদর কিংবা ৩ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এই সাঁকোর ওপর নির্ভরশীল। এ ব্যাপারে উপজেলার কর্তৃপক্ষকে অনেক বার অবগত করেছি। কালাচাঁদ গ্রামের রুপা আক্তার পড়াশোনা করেন মহাদেবপুর গার্লস হাইস্কুলে। স্কুল কিংবা প্রাইভেট পড়তে তার প্রতিনিয়ত এই বাঁশের সাঁকো ব্যবহার করতে হয়। ঝুঁকিপূর্ণ এবং বান্ধীদের বাড়িতে বেড়াতে নিয়ে আসতে পারি না এই সাঁকোর কারনে। এটা কষ্ট এবং লজ্জার বললেন ওই শিক্ষার্থী। মহাদেবপুর ইউনিয়নের সাহিলী গ্রামের মো: আলমগীর হোসেন (৪০) বলেন, সাঁকো দিয়ে শিশু-বয়স্কদের পারাপারে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। কোনো যানবাহন গ্রামে যেতে পারে না।
এই সাঁকো থেকে পড়ে দূর্ঘটনায় আহত হচ্ছে প্রায়শই। এছাড়াও পণ্য পরিবহনে বাড়তি ঝামেলা ও দ্বিগুণ অর্থ অপচয় হচ্ছে। অটো চালক মোঃ মিজান বলেন, সুস্থ মানুষ সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে প্রায়ই দুর্ঘটনায় পড়ছেন। অসুস্থদের অবস্থা বলার মতো নয়। বেশি সমস্যা হয় প্রসূতিদের নিয়ে। কিন্তু সাঁকোটিও নিয়মিত সংস্কার করতে না পারায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে, ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা তাপস কুমার বসু তুফান বলেন, বর্ষাকালে চার মাস তাঁদের সাঁকো ব্যবহার করতে হয়। আর পানি একেবারে শুকিয়ে গেলে নদীর উচু ঢাল মারিয়ে ওপরে উঠতে হয়। এখানে একটি পাকা ব্রীজ নির্মানে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে জোর দাবী জানাচ্ছি। শিবালয় উপজেলার মহাদেবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: শাহজাহান বলেন, এখানে একটি ব্রীজ খুবই জরুরী। এলাকার মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগ।
দুই উপজেলার দুই ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় এখানে ব্রীজ নির্মাণে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়েছে। ঘিওর উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো: সাজ্জাকুর রহমান বলেন, ওখানে এপ্রোচ সড়ক নেই এবং ওই রাস্তার আইডি নম্বর নেই। তাই ব্রীজ করা আপাতত সম্ভব নয়। তবে আমি সরজমিন পরিদর্শন শেষে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবগত করবো।
জানতে চাইলে ঘিওর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, একটি সেতুর অভাবে কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ কষ্ট করছেন। তাঁদের দুর্ভোগ লাঘবে ওই গ্রামে একটি সেতু নির্মাণের জন্য স্থানীয় এমপি মহোদয়কে অবগত করা হয়েছে।