অনলাইন ডেস্ক : তারা ‘আঁরার মাইয়্যা, আঁরার গর্ব’। অভিনন্দন আর ভালোবাসায় সিক্ত হলেন পাহাড়িকন্যারা।
দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের আসর সাফ মহিলা ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে ইতিহাস রচনা করেছে বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল। এই দলে ছিলেন বৃহত্তর চট্টগ্রামের পাঁচ নারী ফুটবলার। এদের তিনজনের বাড়ি খাগড়াছড়িতে আর দুজনের বাড়ি রাঙামাটিতে। চট্টগ্রামের মুখপত্র হয়ে ওঠা স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদী সাফজয়ী এই পাঁচ নারী ফুটবলারকে গতকাল বুধবার বিকালে সংবর্ধনা দেয়। আজাদীর এই সংবর্ধনা পরিণত হলো চট্টগ্রামবাসীর সংবর্ধনায়। লাজুক হেসে ভাঙা ভাঙা বাংলায় ফুটবলকন্যারা বললেন, এই সংবর্ধনা তাদের জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। এই প্রাপ্তি তাদের কাছে স্বপ্নের মতো।
বাংলাদেশের নারী ফুটবলের বয়স দুই দশকের বেশি। তবে সঠিক পরিচর্যা হচ্ছে এক দশকের কম সময় ধরে। আর এই এক দশকেই বাংলার নারীরা রচনা করেছে ইতিহাস। সেই ইতিহাসের অংশ বৃহত্তর চট্টগ্রামের পাঁচ ফুটবলার। তারা হলেন মনিকা চাকমা, রূপনা চাকমা, ঋতুপর্ণা চাকমা এবং যমজ দুই বোন আনাই মগিনী ও আনুচিং মগিনী। এদের মধ্যে রূপনা চাকমা দক্ষিণ এশিয়ার সেরা গোলরক্ষক।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই জামালখান চত্বরে ফুটবলপ্রেমীদের ভিড় জমতে থাকে। এরপর সময় যত গড়িয়েছে ততই বেড়েছে ভিড়ের মাত্রা। একপর্যায়ে তা পরিণত হয় লোকারণ্যে। ফুটবলকন্যাদের টানে, সর্বোপরি আজাদীর প্রতি ভালোবাসায় সবাই একাকার হয়ে গেলেন।
শুরুতে বাজল জাতীয় সংগীত। এরপর মঞ্চে এলেন লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিক্ট ৩১৫-বি৪ এর প্রাক্তন গভর্নর এবং বাংলাদেশ মহিলা সমিতির সভানেত্রী লায়ন কামরুন মালেক। সবাইকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, নারীরা এখন আর অর্ধেক নয়; নারীরা এখন একক। পাহাড়ি জনপদে নিজেদের তিলে তিলে গড়ে তোলা পাঁচ নারী আজ চ্যাম্পিয়ন। অদম্য সাহস আর মনোবল নিয়ে কাজের ফাঁকে ফাঁকে নিজ গ্রাম থেকে অনেক দূরে গিয়ে ফুটবল খেলে দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপ জিতে এসেছে এই কন্যারা। জীবনযুদ্ধে এরা থেমে থাকেনি। পাহাড়ের মতো মাথা উঁচু করে উঁচু-নিচু টিলা পেরিয়ে পৌঁছে গেছে সাফল্যের শিখরে। তাই তোমাদের অভিবাধন। তিনি আরো বলেন, এটি কেবলই শুরু। সামনে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। থেমে গেলে চলবে না।
‘আঁরার মাইয়্যাদের’ নিয়ে এরপর মঞ্চে আসেন একুশে পদকপ্রাপ্ত দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, প্রাক্তন জেলা গভর্নর কামরুন মালেক, দৈনিক আজাদীর পরিচালনা সম্পাদক ওয়াহিদ মালেক, নির্বাহী সম্পাদক শিহাব মালেক এবং জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন। তাঁরা পাঁচ ফুটবলকন্যার গলায় মালা ও ‘আঁরার মাইয়্যা, আঁরার গর্ব’ লেখা স্ল্যাশ পরিয়ে দেন।
এরপর মঞ্চে এসে ফুটবলারদের উপহার তুলে দেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দীন, সিএমপি কমিশনার কৃঞ্চপদ রায়, চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, প্রাক্তন জেলা গভর্নর ও বাংলাদেশ মহিলা সমিতির সভানেত্রী লায়ন কামরুন মালেক এবং বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের ন্যাশনাল টিমস কমিটি এবং মহিলা উইংসের সদস্য বিসিবি পরিচালক মনজুর আলম মঞ্জু।
শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য দেন বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দীন, সিএমপি কমিশনার কৃঞ্চপদ রায়, চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, ওয়েল গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের ন্যাশনাল টিমস কমিটি এবং মহিলা উইংসের সদস্য বিসিবি পরিচালক মনজুর আলম মঞ্জু, লায়ন্স জেলার জোনাল চেয়ারপারসন নিশাত ইমরান এবং কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন।
সবার বক্তব্যে ছিল একটাই আহ্বান, পথচলা কেবল শুরু। এখানে থামা যাবে না। যেতে হবে বহুদূর। দক্ষিণ এশিয়ার গণ্ডি পেরিয়ে লক্ষ্য তাক করতে হবে এশিয়ার মঞ্চে। কঠোর অনুশীলন অব্যাহত রাখতে হবে। কৈশোর পেরুনো মেয়েদের সামনে রয়েছে দীর্ঘ ভবিষ্যৎ। কাজেই এই সাফল্যকে সামনের পথচলার পুঁজি করতে হবে। আরো সাফল্য আনতে হবে দেশের জন্য।
অনুষ্ঠানের সবশেষ বক্তব্য নিয়ে আসেন দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক। তিনি বলেন, সব ভালো কাজের সাথে আজাদী ছিল। ভবিষ্যতেও থাকবে। আজাদীর এই অনুষ্ঠানকে নিজেদের অনুষ্ঠানে পরিণত করায় চট্টগ্রামের মানুষকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানে ফুটবলকন্যাদের সাথে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনের কেক কাটেন সকলেই।
প্রকাশক ও সম্পাদক: প্রকৌশলী দিলু বড়ুয়া । সম্পাদকীয় কার্যালয়: ৯২ মোমিন রোড, শাহ্ আনিছ মসজিদ মার্কেট(৪র্থ তলা), জিপিও, কোতোয়ালী, চট্টগ্রাম। যোগাযোগ: ইমেল: [email protected], মোবাইলঃ ০১৮৫১০৭১১৭০
Copyright © 2025 ইতিহাস ৭১ টিভি. All rights reserved.