গভীর রাত। হঠাৎ করেই ঘুমের ঘোরে টের পেলো ঘুমন্ত মানুষ। পানিতে ভেসে যাচ্ছে মেঝে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আসবাব পত্র সহ সবকিছু তলিয়ে যাচ্ছে। চারিদিকে শোরগোল শোনা যাচ্ছে হায় আল্লাহ, হায় ভগবান, হায় ইশ্বর যার যার স্রষ্টাকে ডাকছে মানুষ। কান্নার রোল পড়ে গেছে। ছুটছে মানুষ।, ছেলে মেয়ে, সন্তান- সন্তুতি, বয়ো- বৃদ্ধ, আবাল -বনিতা, কৃষক -জেলে, কামার- কুমার , ধনী- গরীব, সহায়-অসহায় সকলের শুধু বাঁচার আকুতি।
শহর- গ্রাম, হাওর -নদী , খাল-বিল তলিয়ে গেছে, তলিয়ে গেছে রাস্তা-ঘাট, সব পানিতে থৈ থৈ। যেদিকে চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। পানিছাড়া যেন আর কিছুই দেখা যায় না। ভেসে গেছে ঘরের তৈজসপত্র, খাবার, ধান-চাল, সবজি, হা্ঁস- মুরগি, গরু- ছাগল। পেটে খাবার নেই, পরিবারের মানুষ ছিন্ন- বিচ্ছিন্ন হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। কেউ আশ্রয় নিয়েছে টিনের চালে,, গাড়ীর উপরে, বাসার ছাদে, বাচ্চাকে পাতিলে রেখে ভাসিয়ে দিয়েছে মা- বাবা অথবা কোন অভিভাবক, তবুও বেঁচে থাকুক এই ভরসায়, হয়ত নিজে বাঁচতে পারে নাই। কি এক করুণ দৃশ্য।
হাওর পাড়ের কিছু ধনাঢ্য মানুষ হাজার হাজার মন ধান গোলায় তোলে রেখেছে। ব্যাংকে টাকা গচ্ছিত রাখা আছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে সেসব ধান অথবা ভেসে গেছে। অসহায় হয়ে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। পেটে প্রচন্ড ক্ষুধা। কি নির্মম নিয়তি!
৷ এতক্ষণ বর্ণনা দিচ্ছিলাম নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলার বানভাসিদের পরিস্থিতির চিত্রের। পানি কমতে শুরু করেছে। গিয়েছিলাম নেত্রকোণা জেলার কলমাকান্দা উপজেলায় বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতি দেখার জন্য। যাতায়াতের মাধ্যমে দেখলাম প্লাবিত এলাকায় পাকা রাস্তা ভেঙ্গে গেছে, কাঁচা রাস্তার অবস্থা তো আরও খারাপ। রংছাতি, বিশাউতি, নয়া চৈতা, রায়পুর,, জঙ্গলবাড়ি বরুয়াকোণা, রংছাতি থেকে কলমাকান্দা উপজেলার যোগাযোগ বন্ধ। সেনাবাহিনীর উদ্যোগে জনগণের সহায়তায় হাসানোয়াগাঁও ব্রীজে রাস্তা মেরামতের কাজ চলছে। বন্যা পরবর্তী অবস্থা দেখতে গিয়ে নিজের মটর সাইকেল ব্রীজের কাছে রেখে পায়ে হেঁটে ঐপারে যেতে হয়েছে।
রংছাতি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাবুল পাঠান জানান, তাঁর এলাকায় পাহাড়ী ঢলে ক্ষয়- ক্ষতি অনেক। বন্যা পরবর্তী আশ্রয় কেন্দ্র থেকে মানুষ ঘরে ফিরতে শুরু করেছে। বন্যায় অনেক ঘর-বাড়ী ভেঙ্গে গেছে, হাঁস - মুরগী, গরু ছাগলকারও আছে কিন্তু এসব পশুখাদ্যের খুবই অভাব, বন্যাার্তদের জন্য সরকারি ত্রাণ প্রশাসনের লোক ও সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে দেয়া হচ্ছে। তিনি আরও জানান সরকারি ত্রাণের পরিমাণ বন্যার্তদের জন্য পর্যাপ্ত নয় আরও প্রয়োজন। বন্যা পরবর্তী ক্ষতিগ্রস্তদের পূনর্বাসনের জন্য তালিকা তৈরী করা হচ্ছে।
১ নং কলমাকান্দা সদর ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ আঃ আলী জানান, তাঁর ইউনিয়নে ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি মানুষের পাশাপাশি ক্ষতি হয়েছে গৃহপালিত পশু গরু- ছাগল, হাঁস- মুরগীর। ঐ ইউনিয়নে দুই হাজারের ও উপরে গবাদি পশুর মৃত্যু হয়েছে। সকল ফিশারীজের মাছ ভেসে গেছে। মৎস্য খামারীদেরও কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এসব ব্যবসায়ীদের কে ক্ষতিপূরণ দেওয়অ প্রয়োজন। মানুষের ঘরবাড়ি ভাঙ্গা, আধাভাঙ্গা অবস্থায় আছে, অনেকেই একমাত্র মাথা গোঁজার ঠাঁই টাও হারিয়েছেন। বন্যার পানি কমছে, আশ্রয় কেন্দ্র থেকে লোকজন বাড়ি ফিরছে। সরকারী বেসরকারী ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত আছে। বন্যা পরবর্তী ক্ষতিগ্রস্ত দের তালিকা করা হচ্ছে প্রশাসনের কাছে জমা দেওয়া হবে।
৩নং পোগলা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোঃ মোজাম্মেল হক বলেন, "আমার এলাকায় বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। আশ্রিত মানুষ বাড়ীতে ফিরে যাচ্ছে। সরকারি বেসরকারি ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত আছে। বন্যা পরবর্তী ক্ষতিগ্রস্ত দের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।
প্রকাশক ও সম্পাদক: প্রকৌশলী দিলু বড়ুয়া । সম্পাদকীয় কার্যালয়: ৯২ মোমিন রোড, শাহ্ আনিছ মসজিদ মার্কেট(৪র্থ তলা), জিপিও, কোতোয়ালী, চট্টগ্রাম। যোগাযোগ: ইমেল: [email protected], মোবাইলঃ ০১৮৫১০৭১১৭০
Copyright © 2025 ইতিহাস ৭১ টিভি. All rights reserved.